আমরা সবাই নিজের সন্তানের ভাল চাই। আপনারা তাদের সুপরামর্শ দেন এবং আশা করেন যে এতে তাদের ভাল হবে। কিন্তু কখনও কি আপনি ভেবে দেখেচেন যে আপনি আপনার সন্তান কে খারাপ পরামর্শও দিচ্ছেন।
এম্মা সেপ্পালা, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফোর কম্প্যাশান অ্যান্ড অ্যালট্রুইস্ম রিসার্চ এর সায়েন্স ডিরেক্টর এরকমই জানিয়েছেন। তার মতে আমরা প্রায়ই আমাদের সন্তান্দের খারাপ পরামর্শ দিয়ে ফেলি।
সেপ্পালা এই কুপরামর্শের একটি তালিকা তৈরি করেছেন। এই রিসার্চ এর বিস্তারিত বর্ণনা সেপ্পালার ওয়েবসাইটে রয়েছে। এখানে তুলে ধরলাম তার এক অংশ।
# কুপরামর্শ ১ – ভবিষ্যৎ চিন্তা কর। শুধু পরিনামের কথা মাথায় রাখ।
তাদের বলা উচিত – প্রত্যেক মুহূর্ত উপভোগ কর। বর্তমানে থাক।
“এক উদ্দেশ্যে কেন্দ্রিত থাকা সহজ নয়। গবেষণা বলে যে আমারা ৫০% সময় অন্যমনস্ক থাকি, হয় অতিতের কথা ভেবে দুঃখিত হই, নইলে ভবিষ্যতের ব্যাপারে চিন্তা করে উদ্বিগ্ন হই। এর পরিনাম রাগ, অনুতাপ এবং উৎপীড়ন”।

“বাচ্চাদের নিশ্চয় উদ্দেশ্য রাখা উচিত। কিন্তু সবসময় তাদেরকে এই বড় উদ্দেশ্যর প্রতি কেন্দ্রিত না করে, সাময়িক ব্যাপার উপভোগ করতে উৎসাহিত করুন”।
# কুপরামর্শ ২ – চাপে থাকা স্বাভাবিক, তাই জোড় করে কাজ কর।
তাদের বলা উচিত – আরাম কর, খেলা কর
“বাচ্চারা আজকাল খুব কম বয়সে মানসিক চাপ এবং উৎপীড়নে ভুগছে। তাদের চিন্তা স্কুলে পড়াশোনা এবং রেজাল্ট নিয়ে। অনেকেই এই চাপে পড়ে আত্মহত্যাও করছে”।
“... আমরা স্কুল এবং চাকরি জীবনের চাহিদা সহজে বদলাতে পারব না। কিন্তু আমারা ধ্যান, যোগ-ব্যায়াম এবং খেলা করে এই চাপ কে কম রাখতে পারি”।
# কুপরামর্শ ৩ - ব্যাস্ত থাক
তাদের বলা উচিত – কিছু না করলেও আনন্দে থাক
“বাচ্চারা যে কোনও মুহূর্ত কে আনন্দজনক করে তুলতে পারে, তাদের জন্য সবকিছুই খেলা, তা সে ওয়েটিং রুমে বসে থাকাই হোক, বা স্হেঁটে স্কুল যাওয়া। বই পড়া, কুকুর কে হাঁটতে নিয়ে যাওয়া, বা গাছ তোলে শুয়ে থাকা এবং মেঘ দেখা, এই ধরনের কার্যকলাপ মনকে শান্ত এবং আনন্দিত করে।

“এই ধরনের কাজের মানে এই নয় যে তাদের পড়াশোনা থেকে বিচ্যুত করা, কিন্তু এই ধরনের অভ্যাস দরকার যাতে তারা সবসময় তাড়াহুড়ো না করে এবং খেলার সময় পায়। যাতে তারা স্বাধীন ভাবে স্বপ্ন দেখে এবং আনন্দ করে”।
# কুপরামর্শ ৪ - যাতে ভাল তাই কর
তাদের বলা উচিত – ভুল কর এবং তার থেকে শেখ
“মাতা পিতা রা তাদের সন্তানদের সেই কাজে উৎসাহিত করতে চায় যা তারা সহজে করতে পারে। তারা বলে, “আমার ছেলে অঙ্কে ভাল”, “আঁকা তে ভাল” ইত্যাদি। কিন্তু স্ট্যানফোর্ড এর এক গবেষণার মতে এই ধরনের চিন্তাধারা আপনার সন্তানকে এক বৃত্তে বেঁধে দেয় এবং তারা এই বৃত্তের বাইরে কোনও কিছু চেষ্টা করতে চায় না।
“কিন্তু আমাদের মস্তিষ্ক নানা ধরনের নতুন জিনিস সিখতে চায়। এবং নিজের ভুল থেকে সেখাও এক বড় শিক্ষা। তাই আপনার সন্তান কিসে ভাল শুধু সেটা না দেখে তাদের বলুন চেষ্টা করলে সব কিছুই সম্ভব”।
# কুপরামর্শ ৫ - তোমার দুর্বলতা জেনে রাখ এবং কাউকে তা বুঝতে দিও না, শক্ত থাক
তাদের বলা উচিত – নিজেকে ভালবাসো

“আমরা মনে করি আত্ম – সমালোচনা নিজেকে উন্নত করতে দরকার। কিন্তু আত্ম সচেতন দরকারি, সমালোচনা নয়। মা-বাবা রা অনেক সময় বাচ্চাদের খুব বেশী সমালোচনা করে। যেমন এক অন্তর্মুখী বাচ্চা কে বলা যে তুমি বহির্মুখী হয়, তার আত্মবিশ্বাস কম করে তোলে।
তাই বাবা-মায়েদের সন্তান কে শেখান উচিত আত্ম সমবেদনা। এর মানে নিজেকে নিজের বন্ধু মনে করা দুঃখের সময়। এর মানে এই নয় যে তারা ভুল করেও অভিমান ও অসংযত থাকুক। তারা যেন নিজের প্রতি খারাপ ব্যাবহার না করে”।
# কুপরামর্শ ৬ - পৃথিবী কঠিন – তাই সবকিছুতে এক নম্বর হও
তাদের বলা উচিত – সবাই কে ভালবাস, সমবেদনাশীল হও
“গবেষণায় বলে যে আমাদের সামাজিক ব্যাবহারই সুস্বাস্থ্য, প্রসন্নতা এবং দীর্ঘায়ুর জন্য দায়ি। একে ওপরের সাথে ভাল সম্বন্ধ আমাদের আনন্দ দেয় ও সুখী করে। এই প্রসন্নতা আমাদের বুদ্ধি বাড়ায় এবং সাফল্য এনে দেয়।
“বাচ্চারা স্বাভাবিক ভাবে সমবেদনাশীল এবং সদয়। কিন্তু মনোবিজ্ঞানী জা তোঁএং এর বই “জেনেরেশান মি” তে লিখেছেন আজকাল সবাই নিজেকে ব্যাস্ত। তাই এটা দরকারি যে আপনারা বাচ্চার স্বাভাবিক প্রকৃতিকে সযত্নে প্রতিপালন করুন যাতে তারা সদয় থাকে”।
সবসময় পরামর্শর দরকার নেই – শুধু সাহায্য করুন
অনেকসময় শেখানোর দরকার পড়ে না। শুধু তাদের দরকার পুরো করা উচিত এবং তাদের শৈশব কে শৈশব থাকতে দেওয়া উচিত। তাদের ভালবাসুন এবং জানান যে তারা আপনার প্রিয়জন।
যখন আমরা বাচ্চাদের ভাল মানুষ হতে সেখাই তখন আমরা তাদের জীবনের জন্য তৈরি করছি।