জীবন যখন স্বামী এবং স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে প্রবেশ করে তখন বিয়ের সেই মাধুর্য হারিয়ে যেতে পারে। এর কারণ কখনও হয় সন্তান জন্মের পর যৌনতা — মহিলাদের ক্ষেত্রে, সন্তান জন্মের পর অনেক সময়ই আমাদের যৌন স্পৃহা কমে যায়, কারণ আমাদের শরীর সারতে থাকে এবং আমরা নবজাতকের পরিচর্যায় শক্তিক্ষয় করি।
উভয়পক্ষের ধৈর্য ও প্রচেষ্টা দ্বারা আবার বিয়ের সময়কার প্রেম জীবনে ফিরিয়ে আনা খুবই সম্ভব। এখন, যদি আপনার স্বামী ভাবেন যে ‘যোগাযোগ’ ও ‘বোঝাপড়া’ ওনার পক্ষে খুবই ঝামেলার ব্যাপার — আর বাড়িতে একটি যৌন পুতুল নিয়ে আসেন?
জনৈকা জাপানী মা রিহো ওজাকিকে এরকম এক অবমাননাকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল যখন তাঁর স্বামী মাসায়ুকি একটি সিলিকন যৌন পুতুল কিনে নিয়ে এলেন। প্রমাণ সাইজের পুতুলটির নাম মায়ু, তাঁর বিছানায় শুতো, তাঁর সঙ্গে ডেটিং এ যেত এবং প্রেম করার সময় যৌন উদ্দীপক অন্তর্বাস পরত।
Image Credit: Behrouz Mehri/AFP
“জাপানি মহিলারা ঠান্ডা অনুভুতিসম্পন্ন”
মাসাযুকির মতে, তাঁদের কন্যা সন্তানের জন্মের পরই তাদের বিবাহিত জীবন বরবাদ হয়ে যায়, মেয়েটি এখন একটি কিশোরী। “সন্তানের জন্ম দেবার পর থেকেই আমারা যৌন ক্রিয়াকলাপ বন্ধ করে দিয়েছিলাম এবং আমি গভীরভাবে একাকীত্ব অনুভব করেছি,” একটি সাক্ষাত্কারে তিনি এএফপিকে বলেন।
তাঁর স্ত্রীর মনের নাগাল পাবার চেষ্টা বা তার জীবনযুদ্ধের কথা বিবেচনা না করে, তিনি বলেন যে সে মহা স্বার্থপর। “জাপানি মহিলারা ঠান্ডা অনুভুতিসম্পন্ন,” তিনি বলেছেন।
“তারা খুব স্বার্থপর। পুরুষেরা চায় যে যখন তারা দিনভর খেটেখুটে বাড়ী ফিরবে গজগজ না করে কেউ তার কথা শুনুক।”
তাই যখন স্বামীটি শোরুমের ভেতর যৌন পুতুল মায়ুকে দেখতে পেলেন, সেই পুতুলটির মাঝে তিনি তাঁর স্বপ্নে দেখা নমনীয়, অসাড় নারীটিকে খুঁজে পেলেন। “এটি একেবারে প্রথম দর্শনে প্রেম,” তিনি বলেন।
Image Credit: Behrouz Mehri/AFP
যখন তিনি তাঁর সিলিকন নারী কে ঘরে নিয়ে আসেন, স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর স্ত্রী রিহো প্রচন্ড রেগে গিয়েছিলেন। কিন্তু ততদিনে তিনি হাল ছেড়ে দিয়ে মাসায়ুকির অনুভূতির ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন হয়ে গেছেন।
ভেতরে ক্ষোভ থাকলেও এই মা তাঁর কর্তব্যপরায়ণ গৃহবধূর ভূমিকা পালন করে চললেন। “আমি বাড়ির কাজ করে চলেছি,” দুঃখভরা কন্ঠে তিনি জানালেন। “আমি রান্না করি, ঘর পরিষ্কার করি, কাপড় কাচি। যৌনতার চাইতে আমি ঘুমাতে বেশী পছন্দ করি।”
আর এই দম্পতির মেয়েটি? “যখন আমার মেয়ে বুঝল যে এটা কোনও বিশাল বার্বি পুতুল নয়, সে প্রচন্ড বিরক্ত হল এবং বলল যে এটা কুরুচিকর,” মাসায়ুকি স্বীকার করলেন। কিন্তু মনে হল তিনি তাঁর কৃতকর্মে অবিচল আছেন, বলে চললেন, “কিন্তু ও এখন মায়ুর পোষাকগুলি ব্যবহার করার মতো বড় হয়ে গেছে।”
অপসারণযোগ্য মাথা
ডেটিং এর দিনে মাসায়ুকি তাঁর সিলিকন প্রেমিকাকে একটি হুইল চেয়ারে বসিয়ে নিয়ে যান। তাঁরা ছবি তোলার জন্য কায়দা করে দাঁড়ান, হোটেলে গিয়ে প্রেম করেন, অনেকক্ষণ ধরে একসঙ্গে স্নান করেন — যা যা রোমান্টিক কাজ স্বামী-স্ত্রী করতে পারে, সব করেন।
Image Credit: Behrouz Mehri/AFP
আরেকজনের বয়স ৬২ বছর, বিবাহিত এবং দুই সন্তানের পিতা, সেনজি নাকাজিমা তাঁর যৌন পুতুলটিকে সঙ্গে নিয়ে সারফিং ও পিকনিক করেন। আর অবশ্যই, সেটিকে নিয়ে বিছানাতেও যান।
আজকের যৌন পুতুলের বাজারে মায়ু এবং তার সমগোত্রীয় পুতুলদের জননেন্দ্রিয়, নিয়ন্ত্রণযোগ্য আঙ্গুল এবং চরম জীবন্ত ত্বক থাকে। এ জাতীয় পুতুল প্রস্তুতকারক সংস্থা ওরিয়েন্ট ইন্ডাস্ট্রির ম্যানেজিং ডিরেক্টার হিডিয়ো সুচিয়া দাবী করলেন, “এগুলি এখন একেবারে আসলের মতো হয় আর মনে হয় যে আপনি মানুষের ত্বক স্পর্শ করছেন।”
Image Credit: Behrouz Mehri/AFP
৬০০০ আমেরিকান ডলার দামের পুতুলও এসেছে, যার মাথা বদলানো যায় — কারণ, আপনি জানেন, যদি স্বামীরা চায় যে বিরক্তিকর মনুষ্যতা মনে না এনেই তারা তাদের সিলিকন মেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ করবেন।
Image Credit: Behrouz Mehri/AFP
প্রতি বছর প্রায় ২০০০ জীবন্তপ্রতিম যৌন পুতুল জাপানে বিক্রী হয়। সিঙ্গাপুরের একজন সরব্রাহকারী জানিয়েছেন যে ব্যবসা শুরু করার ছ মাসের মধ্যে ২০ জন ক্রেতা পেয়ে গেছেন।
“এরা মহিলাদের মতো অভিযোগ করে না”
কিন্তু এই যৌন পুতুলগুলি যতই প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক না কেন — যতই মানুষের মতো সজীব ত্বক হোক না কেন বা যতই বাস্তবিক দেখতে হোক না কেন — কিছু তো নিশ্চিতভাবেই আছে যা প্রকৃত নারীর পরিবর্ত হতে পারে না।
সুতরাং কেন এই স্বামীরা এই অসাড় প্রতিমার জন্য তাঁদের স্ত্রীকে ত্যাগ করেন? উদাহরণস্বরূপ, নাকাজিমা তাঁর স্ত্রীকে পর করে দিয়েছেন, কারণ তিনি পারিবারিক গৃহে তাঁর পুতুল সাওরিকে নিষিদ্ধ করেছিলেন।
একটি মহিলার দৃষ্টিকোণ থেকে এর জবাবকে সম্ভবতঃ সাবেক নারী বিরোধিতা বলে মনে হতে পারে। এদের মধ্যে কিছু পুরুষ এটা কিভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, এখানে দেওয়া হল।
“আমার মনে হয় ভবিষ্যতে আরও বেশী করে ছেলেরা পুতুলের সঙ্গে বসবাস করতে আগ্রহী হবে,” বলে দিলেন যোশিকাতা হিয়ডো, যার একটি সমঝদার মেয়ে বন্ধু আছে। “এতে চাপ অনেক কম এবং এগুলি মহিলাদের মতো অভিযোগ করে না।”
নাকাজিমা আরও বললেন, “মানুষ হলেই একগাদা চাহিদা ….. আমি আর কখনও বাস্তব মহিলাদের সঙ্গে ডেটিং করবো না — তারা হৃদয়হীন।”
যা মনে হচ্ছে, এইসব পুরুষেরা একটি গৃহপালিত, নিস্তেজ স্ত্রী চান। এমন একজন স্ত্রী যে সারাদিন বাচ্চাদের দেখাশোনা করার পরও কখনও তার ক্লান্তির কথা বলবে না। এমন একজন স্ত্রী যার নিজস্ব আবেগ আর আকাঙ্ক্ষা সহ সে একটি আলাদা সত্বা হলেও কখনও কিছু দাবী করবে না।
যদিও এই স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের ক্লান্তিকর এবং হৃদয়হীন বলে দোষারোপ করে থাকেন, তবুও তাদের আচরণও নিজেদের স্ত্রীর অনুভুতির প্রতি তাদের সংবেদনশীলতার পরিচয় দেয় না। বিবাহিত জীবনে নানা সমস্যা থাকতে পারে কিন্তু তবুও চিরতরে একটা সর্বদা বশীভুত অলীক সত্বার দিবাস্বপ্নে বিভোর না থেকে সে সমস্যাগুলি থেকে উত্তীর্ণ হবার চেষ্টা করাই শ্রেয়।
এ বিষয়ে মা’দের দৃষ্টিভঙ্গি কি? আপনার স্বামী যদি বাড়িতে একটা যৌন পুতুল নিয়ে আসেন তাহলে আপনার কেমন লাগবে? এ সম্বন্ধে আপনার ভাবনার কথা নীচের কমেন্টস এ জানান!
Source: www.theindusparent.com