যখন জন্ম নিতে চলা একটি শিশু জরায়ুতে বেড়ে ওঠে, তখন নাভির সঙ্গে যুক্ত নাড়ির সঙ্গে সহাবস্থান করার উপায় খুঁজে নেয়, কারণ এটি তাদের জীবনধারা রক্ষা করে, তাদের অক্সিজেন ও মায়ের শরীর থেকে পুষ্টি সরবরাহ করে। কিন্তু প্রসব ব্যথা ও শিশুর জন্মের সময় এই গুরুত্বপূর্ণ নাড়িটি বিপদের কারণ হয়ে ঊঠতে পারে।
এখানে নাড়ি সংক্রান্ত কিছু ঝুঁকির বিষয়ে জানানো হল, শিশু জন্মের প্রস্তুতি নেবার সময় যেগুলি সম্পর্কে ডাক্তারেরা সাধারণত সজাগ থাকেন।
১। আম্বিলিক্যাল কর্ডের স্থানচ্যুতি
প্রসব ব্যথার সময় আম্বিলিক্যাল কর্ডের কিছু অংশ যদি জরায়ুর খোলা মুখের বাইরে বেরিয়ে আসে, তাহলে এরকম হয়। সময়ের আগেই বেরিয়ে আসার ফলে নাড়িটি শিশুর শরীরে জড়িয়ে গিয়ে অক্সিজেন সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা দেখা দেয়।
আলাইলো থেকে আসা বারবারা* নামে একজন মা, ফিলিপাইন্সের দ্যএশিয়াপ্যারেন্টস কে গোপনে জানিয়েছেন যে প্রসব ব্যথা নিয়ে একটি ক্লিনিকের বিছানায় শুয়ে তিনি কি নিদারুণ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। জটিলতার জন্য তাঁকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সবচেয়ে কাছের শাখা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে যাবার পর অবশ্য, শিশুটির মগজে সঠিক পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ না হওয়ায় তাঁর নিখুঁত স্বাস্থ্যবান সদ্যোজাত শিশুটি এক দীর্ঘমেয়াদী চেতনা্যাধি সংক্রান্ত মস্তিষ্কের পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়। নজুরি
নাড়ির স্থানচ্যুতি, যদি সঙ্গে সঙ্গে ব্যাবস্থা না নেওয়া হয়, তা শিশু মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
বার্থইনজুরিগাইড.অরগ এর মতে এগুলি হল আম্বিলিক্যাল কর্ডের স্থানচ্যুতির অন্যতম কারণ :
- ব্রীচ ডেলিভারি (মাথা আগে না বেরিয়ে পা আগে বেরিয়ে আসে)
- প্রিম্যাচিওর ডেলিভারি (নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম)
- অ্যাম্নিওটিক ফ্লুইডের আধিক্য
- অত্যন্ত লম্বা আম্বিলিক্যাল কর্ড

photo: google
২। ন্যুক্যাল কর্ড
প্রচলিতভাবে নাড়ির কুণ্ডলী বলে পরিচিত, এটি তখনই ঘটে যখন আম্বিলিক্যাল কর্ডটি একবার বা একাধিক বার শিশুর গলায় চারপাশে জড়িয়ে যায়। যমজ শিশু, বড় বাচ্চা বা ব্রীচ ডেলিভারির ক্ষেত্রে ন্যুক্যাল কর্ডের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশী হয়। সঠিক চিকিৎসা না হলে এর ফলে রক্ত চলাচল, অক্সিজেন সরবরাহ, হৃৎস্পন্দনের গতি এবং ভ্রুণের বিকাশ ব্যাহত হয়।
যদিও হবু মায়েদের এ ব্যাপারে করণীয় বিশেষ কিছু থাকে না, বিখ্যাত ধাত্রীবিদ্যা ও স্ত্রী, রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মাইকেল হাকাখার মতে, এটি সেরকম চিন্তাজনক কিছু নয়।
"মনে রাখবেন, একটি শিশু আম্বিলিক্যাল কর্ড মারফৎ আপনার শরীর থেকেই অক্সিজেন পায় - আমাদের মতো বায়ুমন্ডল থেকে সোজাসুজি শ্বাসনালীতে পৌঁছায় না," প্যারেন্টস.কম এর জিজ্ঞাসার জবাবে লস এঞ্জেলেস এর এই ডাক্তার বলেন, "এবং প্রথম কাজ যা আপনার ডাক্তার করবেন তা হল, প্রসবের সময় শিশুটির মাথা বেরিয়ে আসার সাথে সাথে তিনি আঙ্গুল চালিয়ে দেখে নেবেন যে ঘাড়ের পিছনে নাড়ি জড়িয়ে রয়েছে কিনা। যদি থাকেও, তা সাধারণত যথেষ্ট ঢিলা হয় যাতে শরীরের বাকী অংশ বেরিয়ে আসার আগেই অনায়াসে এটি মাথাত পিছন দিয়ে গলিয়ে দেওয়া যায়।"
৩। নাড়িতে গিঁট
যদি গর্ভে থাকার সময় আপনার শিশুটির লাথি মারার বা ঢুঁ মারার প্রবণতা থাকে তাহলে গর্ভাবস্থায় নাড়িতে গিঁট পড়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। যদিও গিঁটগুলি খুবই ঢিলাঢালা হয়, কিন্তু প্রসবের সময় এগুলি আঁট হয়ে যেতে পারে।
'হোয়াট টু এক্সপেক্ট' এর মতে, লম্বা নাড়ি যুক্ত শিশুদের ঝুঁকি বেশী থাকে এবং ২০০০ এ ১ টি শিশু জন্মের আগে আঁটো গিঁট পাকিয়ে তোলে যা প্রসবের সময় সমস্যার কারণ হয়।
মা-বাবারা কি কি লক্ষ্য রাখতে পারে? গর্ভাবস্থার ৩৭ তম সপ্তাহের পর ভ্রুণের দাপাদাপি কমে যাওয়া। আপনাকে আর একবার নিশ্চিত করা উচিত যে জরায়ুতে হোয়ারটন'স জেলী বিদ্যমান আছে, যা নাড়িতে গিঁট পড়লেও রক্তনালিকাগুলিকে রক্ষা করে।
আমারই মা ছোট ভাইএর জন্ম দেবার ঠিক আগে এর সম্মুখীন হয়েছিল। মা যখন তাকে স্বাভাবিক জন্ম দেবার জন্য প্রস্তুত, ঠিক তখন দেখা গেল যে জরায়ুতে তার হৃৎস্পন্দনের গতি কমে গেছে। নাড়িতে গিঁট পড়ার সম্ভাবনা আঁচ করে ডাক্তার তখনই জরুরি সি-সেকশন করার সিদ্ধান্ত নেন, যাতে শিশুটিকে নিরাপদে বের করা যায়। ১০ পাউন্ডের বড়সড়, একমাথা চুল নিয়ে সে বেরিয়ে এল। তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ডাক্তারকে ধন্যবাদ!
*বারবারা তাঁর প্রকৃত নাম নয়, তিনি নাম গোপন রাখতে চেয়েছেন কিন্তু আশা করেন যে তাঁর কাহিনী হবু মা'দের শিশু জন্মের জটিলতাগুলি সম্পর্কে সতর্ক করবে।
এই লেখাটি দ্যএশিয়াপ্যারেন্টস ফিলিপাইন্স এর অনুমতিক্রমে পুনঃপ্রকাশিত হল।
Source: theindusparent