ভারতে পুত্রবধূ হওয়া সহজ ব্যাপার নয়। সেখানে সবার দেদার প্রত্যাশা আর বিস্তর মানিয়ে চলা। তা সত্বেও আমাদের দেশে অধিকাংশ পুত্রবধূ সে সব নিয়মকানুন মেনে চলেন আর প্রত্যাশা পূরণ করে চলেন। মজার ব্যাপার, যশস্বিনী বৌমারাও এর ব্যতিক্রম নন।
আমাদের দেশে ঐশ্বর্য রাই বচ্চন একজন খ্যাতনামা বৌমা এবং তিনিও তাই করেছেন।
অন্তর থেকে রক্ষণশীল ঐশ্বর্য অনায়াসে বচ্চন পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পেরেছেন। যদিও তাঁর সঙ্গে শ্বাশুড়ির সংঘাতের নানা গুজব ছড়িয়েছিল, তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক অপরিবর্তিত আছে, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং শ্রদ্ধাশীল।
সম্প্রতি যখন জয়া শেয়ার করে জানিয়েছেন যে তিনি মনে করেন ঐশ্বর্য তাঁর পরিবারের উপযুক্ত এক নিখুঁত বৌ, তখনই একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে।
"আমি চেয়েছিলাম যে আমার ছেলে এমন মেয়েকে বিয়ে করুক, যার মধ্যে ওই মূল্যবোধগুলি আছে"
"আমি একজন সৎ ব্যক্তি, আমার জীবনে চাহিদা নেই, আমি সর্বত্র আনন্দে থাকতে পারি। আমি আশা করি এবং বিশ্ব্বাস করি যে আমি আমার সন্তানদের সঠিক মূল্যবোধ সহ বড় করেছি। আমি আমার ছেলেকে প্রতিদিন বোলে এসেছি যে একটা সিনেমা চলল বা না চলল, সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে, যদি ৩০ বছর পর একটি ছেলে বলে, 'আপনার সঙ্গে কাজ করা কতো আনন্দদায়ক ছিল", তিনি একটি দৈনিককে বলেছেন। সেই সঙ্গে আরও বলেছেন যে কেন ঐশ্বর্য তাঁর পরিবারে নিখুঁতভাবে মানিয়েছে, কারণ তিনিও সৎ এবং তাঁরও পারিবারিক মূল্যবোধ একই রকম।
"সেজন্যই আমি চেয়েছিলাম যে আমার ছেলে যেন এমন মেয়েকে বিয়ে করে, যার ওই মূল্যবোধগুলি আছে, যার সেই ঐতিহ্য আছে, সেই সংস্কৃতি আছে," বচ্চন গৃহিণী বলেছেন।
বার্তালাপের সময় তিনি ঐশ্বর্যর প্রতি তাঁর সহজাত রক্ষাকারীসুলভ প্রবৃত্তির কথাও বলেন, এবং জানিয়ে দেন যে কেন তিনি তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলা কাউকে সহ্য করতে পারেন না।
"যদি সে আমার বাড়িতে থাকত, আমি তাকে চড় মারতাম।"
শাহরুখ খান এবং সালমান খান এর মধ্যে কুখ্যাত সহিংস ঝগড়ার সময়, প্রথম জন ঐশ্বর্য সম্পর্কে বাজে একটা মন্তব্য করে বসেন যা তাঁর শ্বাশুড়ি জয়াকে রাগাণ্বিত করে। বার্তালাপের সময় তিনি সেটি উল্লেখ করেন এবং তাঁর বৌমার প্রতি অশালীন আচরণ করার জন্য শাহরুখকে এক হাত নেন।
তিনি আরও বলে দেন যে তাঁর বৌমা ঐশ্বর্যকে যদি কেউ কিছু বলেন, তিনি তা সহ্য করবেন না।
"তার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করার সুযোগ আমার হয় নি, কিন্তু আমি তার সঙ্গে এ সম্পর্কে কথা বলব। সে যদি সেসময় আমার বাড়িতে থাকত, আমি তাকে চড় মারতাম যেমন আমি নিজের ছেলেকে মারি। কিন্তু আমি আমার অন্তরে তার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছি আর তাই বলেছি।" তিনি বলেন।
জয়া বচ্চন একজন রক্ষাকারী শ্বাশুড়ি-মা
এটি প্রথম ঘটনা নয় যাতে জয়া তাঁর বৌমাকে এত সুরক্ষিত করেছেন। তাঁর আগেই ঐশ্বর্যকে নাম ধরে সম্বোধনের জন্য তিনি সংবাদ মাধ্যমকে তিরস্কার করেছেন।
"কয়া ঐশ্বরিয়া ঐশ্বরিয়া বুলা রহে হো, তুমহারে ক্লাস মে পঢ়তি থি ক্যা?" (কি ঐশ্বর্য ঐশ্বর্য বলে ডাকছ, তোমার ক্লাসে পড়ত নাকি?)," জয়া বচ্চন চীৎকার করে বলেন।
এটা খুবই স্পষ্ট যে জয়া বচ্চনও যথেষ্ট রক্ষণশীল এবং তাঁর পরিবারের মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির প্রতি একান্তভাবে অনুগত। সেজন্য তিনি চান যে তাঁর বৌমাও একই রকম হোক। কিন্তু সেই সঙ্গে তিনি তাঁর বৌমাকে সমানভাবে সুরক্ষাও দিয়ে থাকেন।
এই ধরনের সম্পর্ক কেবল তখনই বিকশিত হতে পারে যখন শ্বশুর-শ্বাশুড়িরা তাঁদের পুত্রবধূকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে আপন করে নিয়ে তার অকুন্ঠ প্রশংসা করেন এবং এটি তখনই সম্ভব হয় যখন সবরকম কাঠিন্য বর্জন করে পরিবারের মধ্যে বেশ খোলামেলা আবহাওয়া বিরাজ করে।
এখন প্রশ্ন হল, কিভাবে শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সঙ্গে সম্পর্কের কাঠিন্য ভাঙ্গা যেতে পারে? অতএব এখানে প্রক্রিয়াটি শুরু করার জন্য কিছু সহজ উপায় দেওয়া হল।
- সৎ হন : সততা শুধুমাত্র কাঠিন্য ভঙ্গ করার একটি সুদূরপ্রসারী বৈশিষ্ট নয়, এর দ্বারা অনায়াসে সম্পর্ক জোড়া দেওয়াও সম্ভব। আপনার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি আজীবন আপনার জীবনে থাকবেন, তাই তাঁদের সামনে আপনি যে রকম সেইভাবে থাকাটাই বেশী ভাল। নিজের আদর্শ ও চিন্তাধারার প্রতি সৎ থাকুন আর তাঁদের যেন মনে না হয় যে আপনি আলাদা একটি ব্যক্তি।
- সুবিবেচক হন : যতই হোক শ্বশুর-শ্বাশুড়ি আপনার জীবন-সঙ্গীর মা-বাবা - কাজেই তাঁরা আপনার কাছ থেকে সেটুকু শ্রদ্ধা ও আদর আশা করতেই পারেন যা আপনি আপনার নিজের মা-বাবাকে করে থাকেন। তাঁরা যদি আপনার জন্য কিছুও করে থাকেন, সেটি স্বীকার করে ও প্রশংসা করে তাঁদের তা জানালে তো ক্ষতি কিছু নেই।
- মানিয়ে নিন : একথা আমরা অস্বীকার করতে পারিনা যে একটি বিয়েতে অনেক কিছু করণীয় থাকে - শুধু দম্পতির মধ্যে নয়, দুটি পরিবারের মধ্যেও। কাজেই, বিয়েটিকে সফল করে তুলতে হলে দু দিক থেকে উভয়পক্ষকেই মানিয়ে নিতে হয়। অতএব মানিয়ে নেওয়া এবং প্রয়োজনে ত্যাগ স্বীকার করা অতি উত্তম ধারণা।