আসুন, এটা স্বীকার করি যে আমাদের সকলেরই এরকম কিছু না কিছু অস্বস্তিকর পারিবারিক সত্য আছে, যা বাচ্চাদের বলা উচিত কিনা সে সম্বন্ধে নিশ্চিত নই।
বাচ্চাদের কাছে এইসব কালো পারিবারিক খুঁটিনাটি নিয়ে কথা বলা প্রায়ই খুব কঠিন কাজ হয়ে ওঠে। হাজার হোক, তারা একটা অনুভূতিপ্রবণ বয়সে আছে এবং উদ্ভুত পরিস্থিতি তাদের মনে যেভাবে রেখাপাত করবে, তাতে তাদের কচি মন প্রভাবিত হতে পারে।
যাইহোক, মনে হচ্ছে বলিউড তারকা মান্যতা দত্ত তাঁর যমজ সন্তানের জন্য সঠিক উদাহরণ স্থাপন করছেন। আমরা সবাই জানি যে অভিনেতা সঞ্জয় দত্তকে তাঁর প্রস্তরাকীর্ণ জীবনে বহু চড়াই-উৎরাই পার করতে হয়েছে।
A post shared by RiVa Diva (@rivadivabollywood) on
এখন, দুটি ছোট্ট শিশুর বাবা হবার সুবাদে, তাঁর জীবনে কিভাবে তিনি সেই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে গিয়ে পড়েছিলেন, তাঁর কাঁধে শুধু বাচ্চাদের কাছে সেসব খুলে বলারই দায়িত্ব নেই, তাঁকে নিজের আচরণ দিয়ে
বাচ্চাদের অনুসরণ করার মতো সঠিক উদাহরণও রাখতে হবে, যাতে শিশুরা তাঁর জীবনের অন্ধকার দিকটাতে প্রভাবিত না হয়।
মান্যতা, এক সুবিশাল মা
কিন্তু তাঁর সঙ্গীর করনীয় কাজের মতো, মনে হচ্ছে, মান্যতা ইতিমধ্যেই নিজেকে এক সুবিশাল মা রূপে প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং তাঁর একটি বিচক্ষণ পরিকল্পনা আছে। মান্যতা ভেবে রেখেছেন যে তাঁদের জীবন সম্পর্কে বাচ্চাদেরকে উপযুক্ত সময়ে কি ঘটছে তা জানিয়ে দেবেন।
প্রকৃতপক্ষে, যেভাবে মান্যতা পরিস্থিতি সামলাচ্ছেন তা বহু মায়েদের কাছে একটা মহান উদাহরণ হতে পারে, যাঁরা হয়তো অস্বস্তিকর সত্য কিভাবে তাঁদের বাচ্চাদের কাছে উপস্থাপন করবেন, তা ভেবে দোলাচলে রয়েছেন।
A post shared by Bollywoodirect (@bollywoodirect) on
এইচ টি কাগজে একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে, মান্যতা শব্দ উচ্চারণে কোনও দ্বিধা না করে বলেছেন,: "এই যুগলের জানা উচিত যে তাদের বাবা ভুল করেছিলেন এবং তার জন্য একটি ভারী মূল্য চোকাতে হয়েছে"।
বাচ্চারা, যারা এখন ৭ বছরের, তাদের বাবার কারাদন্ডের আদেশের সময় ছিল মাত্র ২ বছরের। আর যেহেতু তাদের বাবার অনুপস্থিতির কারণ বোঝার পক্ষে তারা খুবই ছোট ছিল, সেইহেতু এই পরিবার কিছুটা অব্যাহতি পেয়েছিল কারণ, বাচ্চাদের একটি মানসিক অশান্তির মুখোমুখি হতে হয়নি।
কিন্তু এখন তারা বড় হয়ে উঠছে, মা মান্যতা পূর্ণ পরিপক্কতার সাথে তাদের সঙ্গে বিষয়টির নিস্পত্তি করার পরিকল্পনা করেছেন।
ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "কি ঘটেছিল তা বুঝে ওঠার পক্ষে তারা এখনও খুবই ছোট। শাহরানের চোখে বাবা তার নায়ক, তার আদর্শ, তার আরাধ্য মূর্তি। আমি দুটো বিষয় নিয়ে চিন্তা করি। প্রথমত, এটি তার জন্য খুব বেশী আঘাত হয়ে উঠতে পারে; সে হয়তো যা ঘটেছে তার ন্যায্যতা প্রতিপাদন করতে সক্ষম হবে না অথবা বুঝতেই পারবে না যে কেন এটি ঘটেছিল। দ্বিতীয়ত, সে হয়তো ভাবতে শুরু করবে যে তার বাবা যা করেছিল, সেটা তেমন কিছু নয়। আর আমরা এর কোনটাই চাই না।"
A post shared by FilmyTalk (@filmytalk) on
একথা অস্বীকার করা যায় না যে, তাদের বাবা ভুল করেছিল - এটা বলার সাহস প্রত্যেকের থাকে না কিন্তু মান্যতা ঠিক এটাই করবার পরিকল্পনা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, "আমি তাদের বোঝাতে চাই যে এটা কীভাবে ঘটেছিল, কেন এটা ঘটেছিল, এবং কীভাবে সঞ্জু এই ব্যাপারটা নিয়েছিল।"
আর যখন মা মান্যতা এটা উপলব্ধি করেই নিয়েছেন যে সত্যটা বাচ্চাদের সরাসরি তাদের মা-বাবার কাছ থেকেই জানা দরকার, তখন তিনিও আপাততঃ তাদের শৈশবের সারল্য রক্ষা করতে চান।
তিনি বলেন, "কিন্তু তারা এখনও এসবের জন্য খুবই ছোট এবং আমরা তাদের শৈশব ভারাক্রান্ত করতে চাই না।"
আপনার সন্তানকে সত্যের মুখোমুখি হতে সাহায্য করা
এই তারকা পত্নী আমাদের নিখুঁতভাবে দেখিয়েছেন যে মা-বাবা রূপে আমাদের কর্তব্য শুধু জীবনের রূঢ় সত্য থেকে বাচ্চাদের রক্ষা করাই নয়, বরং মাঝে মাঝে এসব সত্য জানানোরও প্রয়োজন হতে পারে যাতে তারা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে যা তারা বুঝতে পারছে না সেইসব বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারে।
A post shared by Bollywood Chills ? (@bollywoodchills) on
বাচ্চাদের সঙ্গে জীবনের কঠিন পরিস্থিতি কিভাবে আলোচনা করা যায়, সে ব্যাপারে মা মান্যতা ইতিমধ্যেই পথ দেখিয়েছেন। আপনাদের জীবনে অস্বস্তিকর সত্য, যদি থাকে, তাহলে কিভাবে আপনার বাচ্চাদের সাথে সে বিষয়ে আলোচনা করবেন, তা এখানে দেওয়া হল।
১। সাধারণ ভুল : মাঝে মাঝে মা-বাবারা দুটো ভুল করে থাকেন - পরিবারের একজন হবার সুবাদে যে সব পারিবারিক তথ্য বাচ্চাদের জানা উচিত, কিছুতেই তার মুখোমুখি বাচ্চাদের দাঁড়াতে দিতে চান না অথবা সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে দেন যাতে বাচ্চারা একটি সুন্দর ছবি পায়।
মনস্তাত্ত্বিকদের মতে, উভয় কৌশলই ভুল। বাচ্চারা বড় হয়ে যাবার পর যখন সত্যিটা জেনে ফেলে, তখন তারা আপনাকে অবিশ্বাস করতে শুরু করে, তাই, আগেভাগে তাদের জানিয়ে দেওয়াই সবচেয়ে ভালো উপায়।
২. সঠিক সময়জ্ঞান : মান্যতার মতোই, সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করাটা বিচক্ষণতা। যখন আপনার বাচ্চারা যথেষ্ট বড় হয়ে আপনি যে তথ্য প্রকাশ করতে যাচ্ছেন তা বুঝতে পারার মতো তৈরী হয়ে ওঠে, তখনই এ বিষয়ে তাদের সাথে স্পষ্টভাবে কথা বলা উচিত।
৩। লজ্জিত হবেন না : যদি আপনার অতীতে এমন কিছু ভুল থাকে, যার জন্য আপনি লজ্জিত, তবুও তা সন্তানদের জন্য জানা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করবেন; এটা তাদেরও নিজস্ব, তাই জেনে যাওয়াটাই ভাল।
কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত এবং দুঃখিত হোন কিন্তু স্বীকার করতে লজ্জিত হবেন না। আপনার ভুল থেকে তাদের শিখতে বলুন এবং শুধু মা-বাবা করেছেন বলে, তাঁদের খারাপ কাজকে কখনও আদর্শের মোড়কে ঢাকার চেষ্টা করবেন না।