একজন ভারতীয় পুত্রবধু হবার সুবাদে, আমি সর্বদা চেয়েছি যে, আমার শ্বশুরবাড়ীর সাথে আমার সম্পর্ক যেন কোনভাবে আমার সন্তানদের সঙ্গে তাদের দাদু-দিদার সম্পর্ককে প্রভাবিত না করে।
নববধূ হিসাবে এ বাড়িতে আসার পর থেকে আমি সবরকম ভাবে চেষ্টা করেছি, কিন্তু এটুকু শুধু বলতে পারি যে এক দশক ধরে চেষ্টা করার পরেও একদিন এমন একটি মন্তব্য করা হল যে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি সব ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল! আমার প্রতি নিষ্ঠুর ও অসম্মানজনক শেষ দিনের চূড়ান্ত মন্তব্য ও কাজটির পরই আমি ঠিক করি যে এর সঙ্গে জড়িত সবাই আমার অনুভুতিটাও জানুক!

আমি আমার শ্বশুরবাড়ি ও আমার স্বামীকে বলেছিলাম যে পরের বার তারা এ কাজ করলে আমি বাধ্য হব প্রতিবেশীদের সাহায্যের চাইতে এবং পুলিশের কাছে যাবার আগে দুবার ভাববো না। বলা বাহুল্য, এটি একটি খুব ভাল লাগার মতো পরিস্থিতি নয় এবং কেউ খুশী হয় নি। কিন্তু যে সময়ে, এমনকি এখনও, আমি আর পরোয়া করি না। যাই হোক, এ ঘটনার পর আমার বড় সন্তান পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারে।
বয়সে একটু বড় হওয়ার দরুন সে চট করে বুঝে যায় যে একটা খারাপ কিছু ঘটল। সে জানত যে তার মা কখনও অভদ্র আচরণ করে না অথচ সে দেখতে পেল যে তার মা খুব রেগে যাওয়ায় অনভিপ্রেত ঘটনাটি ঘটল!
ঘটনাটির কয়েকদিন পর সে আমাকে জিজ্ঞাসা করল যে কি হয়েছিল। আমার সঙ্গে তার দাদু-দিদার ঝগড়া হয়েছে কিনা এবং আমি তাঁদের কে কি এবার কম ভালবাসি?
আমি তাকে বললাম যে আমি তার দাদু দিদাকে মোটেই ভালোবাসি না …
আমি তাকে যা বললাম তার জন্য আমি যে খুব গর্বিত, এমন নয় কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম যে এই সময় সত্যি কথাটা বলে তাকে সত্যের অন্য দিকটি দেখাতে হবে যে কখনও কখনও এমন একটা আবেগ আসে যেটা কোনোমতেই মিথ্যা হতে পারে না।
আমিও তাকে সত্যি কথাটা বললাম যে আমি তার দাদু দিদাকে মোটেই ভালোবাসি না এমনকি আমি তাদের পছন্দও করি না আর ঠিক তেমনি তাঁরাও আমাকে ভালোবাসেন না, বা পছন্দ করে না। জানি, কথাটা ছিল কঠোর, তবু আমি তাকে বলেছিলাম যে কখনও কখনও ভালো না বাসলেও বা কাউকে পছন্দ না করলেও তাদের প্রতি বুনিয়াদি শ্রদ্ধা এবং সৌজন্যবোধ দেখাই এবং তাদের প্রয়োজনগুলি মেটাই।

সেজন্য আমি ঠিক করলাম যে তেনারা যাতে সময়মত খেতে ও সঠিকভাবে বিশ্রাম নিতে পারে, এটুকু অবশ্যই দেখব এবং যখনই তাঁদের সঙ্গে কথা বলব, শ্রদ্ধার সঙ্গেই বলব। শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সাথে আমার যাই হয়ে থাক না কেন, আমি কখনোই তাদের সাথে অশোভন ব্যাবহার করবো না, তাঁদের সাথে কখনও আমি গলা তুলে কথা বলিনি এবং তাঁদের কথার পিঠে কথা শোনাইনি কেবল ওই একটি ঘটনা ছাড়া যা আমাকে কিনারায় ঠেলে দিয়েছে।
অবশ্যই, এটা আমার মেয়ের মনে একটি আঘাত হয়ে এসেছিল। সে চিন্তায় ব্যাকুল ছিল যে, তার বাবা ছাড়া যাকে সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে, অর্থাৎ আমাকে, সে তার জীবনের অন্য দু'টি ব্যক্তিকে, যাঁদের সে ভালবাসে, অর্থাৎ তার দাদু-দিদাকে আর পছন্দ করে না।
সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো কেন আমি এই ভাবে ভাবলাম ...
আমি তাকে বলেছিলাম যে এমনটা তো হতে পারে যে অন্য কোনও ব্যক্তির চিন্তাধারার সঙ্গে তুমি একমত নও আর তাদের কোনো কথায় তোমার খুব আঘাত লাগল, এত আঘাত যে তাদের সাথে আর কথা বলতে চাও না! সে ব্যাপারটা বুঝল।
একবার আমি তাকে আমার তরফ থেকে এ ব্যাপারে আমার বক্তব্য ও অনুভুতির কথা বলেছিলাম, তাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা বলেছিলাম যা তার জন্য যথেষ্ট অর্থপূর্ণ। আমি তাকে বলেছিলাম যে, তার দাদু-দিদা সম্বন্ধে আমি যাই ভাবি না কেন, সে সবসময় তার দাদু-দিদার সঙ্গে তার নিজের ইচ্ছেমতো সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন। তার মানে, সে অনেকবার তাঁদের কাছে গেলেও বা অনেকক্ষণ গল্প করলেও আমি কিছু মনে করবো না বা মর্মাহত হব না।
আমি জানি না, এইরকম পরিস্থিতিতে কিভাবে আপনি এই শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ও আপনার সন্তানদের ব্যাপারটা সামলান। ইছে হলে আপনার বক্তব্য আমাকে জানান।
Source: theindusparent