আসুন এক মুহূর্ত আমরা সত হই - বাবারা সবসময় সে সম্মান পায় না যা তাদের প্রাপ্য। ফাদার’স ডে ছাড়া আমরা কখন বাবা ও স্বামিদের কদর করি পরিবারের এক সদস্য হিসেবে?
হয়ত আপনার সেই আল্পসংখক পারিবার যে “বাড়ির মাথা” কে নিওমিত কদর দেখান, কিন্তু এটা সহজেই বলা যায় কে আমাদের সমাজ বাবাদের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়।
জেসিকা ওকস - এক গর্বিত মা, প্রিয়তমা স্ত্রী, এবং বিখ্যাত ব্লগার - তার ওয়েবসাইট এ তার স্বামীকে ধন্যবাদ যাননোর সিধান্ত নেন, জেসিকার মতে তিনি সেটা সাধারণত পান না।
আসলে জেসিকা সুধু তাকে ধন্যবাদ জানিয়ছেন তা নয়, তিনি তাকে আগ্রাহ্য করার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন!
“আমার আপসোস আমি সঠিক মত ভাব প্রকাশ করিনি। আমি দুঃখিত আমি তোমাকে অগ্রাহ্য করেছি, আর সবসময় রেগে থাকার জন্য আমায় ক্ষমা কর।” তিনি তার ওয়েবসাইট এ লিখেছেন।

ওকসের জনপ্রিয় ব্লগ এ এই লেখা বেরনর পর, সেটা ইন্টারনেট এ ভাইরাল হয়ে ওঠে। এবং হাফিংটন পোস্ট এর মত সংবাদ মাধ্যাম এটা শেয়ার করে।
ওকস অবশ্য এভাবে বিশ্বের মনযোগ আকর্ষণ করতে চাননি, তিনি সুধু তার স্বামীকে এটা জানাতে চেয়েছিলেন যে তিনি সত্যিই কৃতজ্ঞ তার স্বামীর প্রতি। কিন্তু এটা পৃথিবী ব্যাপি সকল পিতাদের ধন্যবাদ জানাতে সফল হয়েছে।
মা ও স্ত্রী রা এটা পড়ুন, ওকসের এই লেখা আপনাকে প্রেরণা দেবে আপনার স্বামীকে কৃতজ্ঞতা জানাতে। তিনি হয়ত নিখুঁত নন, কিন্তু আমি সুনিশ্চিত যে তিনি সেই শ্রেষ্ঠ স্বামী বা বাবা যা তিনি হতে চেয়েছিলেন।
পড়ুন ওকসের সেই ওপেন লেটার -

প্রিয় স্বামী,
কাল ঘুমতে যাবার আগে আমি ভীষণ রেগে ছিলাম। তোমার প্রতি রেগে ছিলাম, পৃথিবীর প্রতি রেগে ছিলাম, আমি ক্লান্ত ছিলাম ও সবচেয়ে বেশি ছিলাম দুঃখিত। আমি জানি সবাই বলে যে রেগে ঘুমাতে নেই, কিন্তু সেসময় এসব আমার মাথায় ছিল না। আমি তোমার সাথে ঝগড়া করতে চাইছিলাম, আর আত্মসংবেদনায় গড়াগড়ি দিতে চাইয়ছিলাম। আমি রেগে ছিলাম যে তুমি বুঝতে পারছনা যে আমি রেগে আছি। আমি দুঃখিত ছিলাম যে তুমি আমার মনের ভাব পড়তে পারছ না; আর আমাকে তোমাকে ভাব ব্যাক্ত করতে হবে। আর আমার বিরক্ত লাগছিল যে এই ব্যাপারটায় আমি একা। এরকম মাঝে মাঝেই হয়। সত্যি বলতে এই সপ্তাহে প্রায় রোজই এরকম হয়েছে।
কেন তুমি বুঝবে না আমার কিরকম লাগছে? কেন তুমি এটা দেখতে পারছনা যে আমি সারাদিন খাটছি, বাচ্চার দেখভাল করছি, ঘর পরিষ্কার করছি, বিল পে করছি এবং তার মাঝে যা কিছু সবই করছি? আমি বাজার দোকান করি। ডিনার এ কি রান্না হবে সেটাও ভাবছি, হয়ত প্রত্যেক দিন রাঁধছি না। আমি সারাদিনে বহু বার কাঁদি, আর ভাবি কি করে সব কিছুর ভারসাম্য বজায় রাখব যখন তুমি সুধুই বসে থাক।
দ্বিতিয় পৃষ্ঠা পড়ুন
প্রত্যেক দিনের মত - কালকের দিনটাও কঠিন ছিল। আমাদের সন্তান খুব ঝামেলা করছিল - আমাকে ভুল বুঝনা সে আমার খুবই প্রিয়। সে সারাদিন ঘুময়নি, তা সত্বেও সে দিনের বেলা খেলা করতে চাইছিল। সে কিছু জিনিশ ভাঙল। সে কান্নাকাটি করল, এবং আমদের পোষা কুকুরটির লোম ছিঁড়ল। সে যখন কুকুরের খাবারের বাটিটা উল্টে দিল আমি ধৈর্য হারিয়ে ফেললাম।
আমি কাঁদলাম। অনেক কাঁদলাম, কিন্তু কেন? এটা তো ঠিক নয়।
আমার ধৈর্য কাল কম ছিল। আমি বাচ্চার কান্না আর চেঁচামেচি সহ্য করতে পারছিলাম না। আমাদের ঘর একদন নোংরা পড়েছিল, আর কাজের চাপ ভীষণ ছিল। আমার মাথা কাজ করছিল না। আর তারপর তুমি অফিস থেকে বারি ফিরলে একদম শান্ত ভাবে। তুমি আমাদের আনন্দে আভিবাদন জানালে, মেয়েকে কোলে তুলে নিলে, এবং ওর খেলনার পাশে বসিয়ে দিলে। তুমি একদম “কুল” ছিলে, যেন পৃথিবীর কোন ঝামেলাই তোমাকে স্পর্শ করেনা - সুধু এক স্নিগ্ধ শান্ত চেহারা।
আমার বিরক্ত লাগল। আসলে এটা ন্যূনোক্তি। আমি প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ ছিলাম। আমি সমস্ত আবেগের জগাখিছুরি হয়ে ছিলাম - দুঃখ, রাগ, বিহ্বল, হতাশ।
কেন তুমি শান্ত ছিলে? তুমি কি জানতে না সারাদিন আমার কেমন কেটেছে? তুমি কি পাত্তা দাও যে আমি এখানে কত খাটছি, আমার স্বপ্ন ও লক্ষ্যের বিবাদ দেখছি, বাচ্চার দেখাশোনা ও পরিবারকে সামলাচ্ছি? তুমি কি দেখতে পাও না? কিন্তু আমি কিছুই বললাম না। আমি সুধু ভেতরে ভেতরে কষ্ট পেলাম, জান… আগামি বিস্ফোরণের জন্য নিজেকে তৈরি করছিলাম।
রাত বাড়ল, আমরা কাজ করে গেলাম, বাচ্চাকে খাওয়ালাম আর নিজেরা খেলাম, কিছুক্ষন সময় একসাথে কাটালাম ও তারপর ঘুমাবার জন্য তৈরি হলাম।
আমি বিছানায় সুয়ে চোখ খুলে তাকিয়ে ছিলাম, ভাবছিলাম যে আমার কাজে আমি উন্নতি করছিনা, আর ভাবছিলাম কীভাবে আমি নিজেকে আরও ভাল করে তুলব। আমরা দুজনে কেউই একে অপরের সাথে কথা বলছিলাম না। আমার আবার রাগ হচ্ছিল ও আবসাদ আমাকে ক্লান্ত করছিল।
তুমি পাশে শুয়েছিলে। বিন্দুমাত্র এটা না জেনে যে আমার মনের ভেতর কি চলছে। তারপর আমরা কথা বলতে শুরু করলাম, আমার বলতে ইচ্ছে করছিল না তবুও। তুমি জিজ্ঞাস করলে কি হয়েছে, আমি বললাম, “কিছু না”। আমি স্নান করতে গেলাম, ও ফিরে এসে চুপচাপ শুয়ে পড়লাম।
তারপর তুমি বললে, “কিছু না বলা টা ছাড় এবার? বল কি হয়েছে?”
শব্দ বমন শুরু হল। আমি সবকিছু বললাম যা আমার মনে ছিল।
তুমি বাচ্চা সাম়্লাতে সাহায্য করনা
তুমি বাড়ি পরিষ্কার কর না
তুমি আমাকে ধন্যবাদ জানাও না
তুমি আমার খেয়াল কর না
আমি কাজে কোন উন্নতি করছিনা
আমার নিজের প্রতি ঘৃণা হয়
তুমি সুধু নিজের কথা ভাব
তালিকা বেড়ে চলল… তারপর আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
বাকি চিঠি তৃতীয় পৃষ্ঠায় পড়ুন
তারপর আজ সকালে আমি ঘুম থেকে উঠলাম। তুমি আমাদের মিষ্টি মেয়েকে তার বিছানা থেকে তুললে, তার জন্য দুধ গরম করে আনলে। যেমন তুমি রোজই করতে। তুমি চান করতে গেলে, কাজে বেরনোর আগে, ময়লা’র বিন টা বাইরে রাখলে, ঠিক, রোজকার মতন। আমি জলখাবার বানালাম এবং মেয়েকে নিয়ে খেতে বসলাম। তুমি কাজে বেরনোর তোরজোড় করে আমাদের কাছে একে, আমার বাই বলে বেরলে - ঠিক রোজকার মত।
এই কাজগুল তুমি প্রতিদিনই কর। তুমি বাগানের কাজ কর, ময়লা ফেল, নিশ্চিত কর যে আমরা সুরক্ষিত। প্রতিদিন।

আমি যখন বলি আমার সাহায্য চাই, তুমি দাও। আমি যখন কাঁদি তুমি সেটা ঠিক করার চেষ্টা কর। যখন তোমাকে কিছু করতে বলি, তুমি সেটা সময় মত কর। তুমি সবসময় “শান্ত” কারণ বাড়িতে একজনের তো শান্ত থাকা উচিত, আর সেটা আমি নই। তুমি সেই আঠা যা আমাদের এক করে রাখে। তুমি আমাকে হাসাও যখন আমি হতাশ হই। তুমি সেই শান্তি আর আরাম যা আমাদের পরিবার কে সম্পূর্ণ করে।
তবে আমি এত রেগে ছিলাম কেন? আমি বলছি - কারন এটা প্রায় পুরটাই আমার মনের ব্যাপার। আমি আত্মসংবেদনায় এতটাই দুবে যাচ্ছি যে সবাইকে আমার সাথে নামিয়ে নিচ্ছি। আমি আশা করছি যে তুমি আমার মনের কথা পড়ে ফেলবে যখন বাস্তবে এটা সম্ভব নয়। তোমার কাছে সোজাসুজি সাহায্য না চেয়ে আমি মনে মনে রাগ করছি। বাচ্চা কাঁদলে আমি দৌরে ওর কাছে যাচ্ছি এবং পরে রাগ করছি যে তুমি কেন গেলেনা বলে।
আমি তোমাকে কিছুই বলিনা, জোর করে সব নিজে করতে যাই। তারপর তোমার ওপর রাগ করি।
আমি সত্যিই দুঃখিত। আমার আপসোস আমি সঠিক মত ভাব প্রকাশ করিনি। আমি দুঃখিত আমি তোমাকে অগ্রাহ্য করেছি, আর সবসময় রেগে থাকার জন্য আমায় ক্ষমা কর। এটা পুরটাই দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। আমি কীভাবে আমার দিন কাটাব, আমি কি ভাবছি। এটা তোমার ব্যাপার নয়, বা তুমি কেন বসে আছ তা নয়। অনেক সময় আমিও সোফা তে বসে থাকি আর মেয়ে কে খেলতে দেখি। তুমি তো আমার ওপর তখন রাগ কর না, তো আমারও তোমার ওপর রাগ করা উচিত নয়।
এটা আমার ভাব প্রকাশের ব্যাপার, আমার তোমাকে খুলে বলা উচিত আমি কি ভাবছি, কি অনুভব করছি। তা না করে আমি সব কিছু চেপে রাখি আর পরে তোমার ওপর রাগ করি।
এটা তোমাকে ভালবাসার ব্যাপার। এটা তোমার ভুল ত্রুটি গুলি কে ক্ষমা করার ব্যাপার, ঠিক যেরকম তুমি আমার গুলি কে ক্ষমা কর। এটা ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপার, সরি বলার ব্যাপার যখন আমি জানি যে ভুলটা আমার।
তাই এখন বলছি - সরি। আমাকে ক্ষমা কর।
আমি দুঃখিত খারাপ ভাবার জন্য ও তোমাকে অবহেলা করার জন্য।
ভালবাসা,
ইতি,
তোমার স্ত্রী।
Source: theindusparent